কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের ২৯১টি গ্রামের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গ্রামের তিন লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর পানিতে ভেসে গিয়ে বন্যা আক্রান্ত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে তারা আশ্রয় নিয়েছেন।
বিশেষ করে ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ ইউনিয়ন, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়া আদ্রা, উত্তর দক্ষিণ, জোড্ডা পূর্ব, পশ্চিম, দৌলখাঁড়, হেসাখাল, পেড়িয়া, মক্রবপুর ইউনিয়নের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ বন্যাকবলিত অবস্থায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে মাছ ধরতে গিয়ে বন্যায় পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর গ্রামের কেরামত আলী (৪৫) নিহত হয়েছেন।
ভয়াবহ বন্যায় রোপা আমন, আউশ ধান, আমন বীজতলা এবং শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে কয়েক শ’ মাছের প্রজেক্ট ভেসে গিয়ে কোটি-কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য চাষীদের চোখে-মুখে কান্নার রোল বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ছিল সবচাইতে ভায়াবহ দিন। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি উঠায় কোমর সমান পানি ভেঙে মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে কেউ নৌকায় করে, আবার কেউ কোমর সমান পানি মাড়িয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছান। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, উপজেলা জামায়াতে ইসলামী, উপজেলা বিএনপি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রের মাঠে পানি উঠায় বন্যা দুর্গতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে পানি খুব ধীরগতিতে কমতে দেখা যায়। এখনো বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে থাকতে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, বৃহস্পতিবার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের জন্য ভয়াবহ একটি দিন ছিল। বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আমাকে ফোন করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমি সাধ্যমতো তাদেরকের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পেঁছানোর ব্যবস্থা করি। এছাড়ার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানও উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেছে।
Leave a Reply